ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘জীবনের ঝরাপাতার” গুরুত্ব :-

by - December 06, 2021

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে জীবনের ঝরাপাতার গুরুত্ব কী ?

অথবা, সরলা দেবী চৌধুরানির জীবনের ঝরাপাতা থেকে আমরা কোন্ ঐতিহাসিক তথ্য পেতে পারি?


ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি সরলা দেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী জীবনের ঝরাপাতা’ ১৯৪৪-৪৫ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিকভাবে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্য সংসদ’ পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থরূপে প্রকাশ করে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থ থেকে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। 


ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘জীবনের ঝরাপাতার” গুরুত্ব :- 


১) ঠাকুরবাড়ির পরিচয় :- এক বালিকার বড়াে হয়ে ওঠার আখ্যানের সঙ্গে সঙ্গে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গৌরবময় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা, ঈশ্বরভাবনা, বিভিন্ন সামাজিক বিধি, নারী স্বাধীনতা প্রভৃতি ‘জীবনের ঝরাপাতায় লেখা আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি হওয়ায় সরলা দেবী চৌধুরানির এই বিবরণ অনেক বেশি গ্রহণযােগ্য। 

২) রাজনৈতিক তথ্য :-  ‘জীবনের ঝরাপাতা থেকে বিপ্লববাদী রাজনীতি ও স্বদেশি আন্দোলনের কথা জানা যায়। সরলা দেবী কীভাবে বীরাষ্টমী ব্ৰত, প্রতাপাদিত্য উৎসব, উদয়াদিত্য উৎসব চালু করে বাঙালি  তরুণদের বিপ্লববাদী জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করেন তার পরিচয় এই গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়।

৩) মনীষীদের পরিচয় :-  সরলা দেবী চৌধুরানি জীবনের ঝরাপাতা’-য় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, অরবিন্দ ঘােষ, মহাত্মা গান্ধি, বালগঙ্গাধর তিলক প্রমুখ মনীষীদের উল্লেখ করেছেন এবং তাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। 

৪) সামাজিক পরিচয় :-  ‘জীবনের ঝরাপাতা’ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাজে নারীর অবস্থান, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ, নারী  শিক্ষা, নারী কল্যাণে ব্রাম্মসমাজের উদ্যোগ, নারী স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে জানা যায়। সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সরলা দেবী চৌধুরানি স্বয়ং ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদন করেন এবং স্বদেশি ও জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন, যা নারী ক্ষমতায়নের দিকটিকে স্পষ্ট করে। 

উপসংহার : সুতরাং জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটি নারী প্রগতি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ঠাকুরবাড়ির ও কলকাতার সমাজজীবনের এক জীবন্ত দলিল। আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় তাই এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম। 




You May Also Like

0 comments